বাংলা বানান ও উচ্চারণ।।Saleh Noor Likhon

 

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা দ্বিতীয় পত্র

                                                  বাংলা ২য় পত্র

                                               বাংলা উচ্চারণের নিয়মসমূহ

 

ছালেহ নূর কাওছার লিখন

বি.এ(অনার্স)এম.এ(বাংলা)রা.বি

বাংলা বিভাগ

উত্তরা টাউন কলেজ

 

**বাংলা উচ্চারণের নিয়মসমূহ লেখো

 

উত্তর: বাংলা উচ্চারণের নিয়মসমূহ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।

১)শব্দের আদ্যএর পরেফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সেক্ষেত্রে’-এর উচ্চারণকারের মতো হয়। যেমন: অদ্য (ওদ্দো), কন্যা (কোন্না) ইত্যাদি

২)শব্দের আদিতে ব-ফলার কোনো উচ্চারণ নেই। যেমন: শ্বাস, শ্বাপদ, দ্বিজ, দ্বার।

 শব্দের মধ্যে -ফলা ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব ঘটায়-বিদ্বা (বিদ্‌দান্), স্বত্ব (শৎতো)

    ৩)পদের মধ্যে কিংবা অন্তে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে -ফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার উচ্চারণ           হয় না। যেমন: সন্ধ্যা (শোন্‌ধা), স্বাস্থ্য (শাস্‌খো) ইত্যাদি।

৪)শব্দের মাঝে বা শেষেক্ষ’-এর উচ্চারণক্‌খহয়ে থাকে। যেমন: দক্ষতা (দোক্‌খোতা), পক্ষ (পোক্‌খো) ইত্যাদি।

৫)শব্দের দ্বিতীয় শব্দাংশে বা ধ্বনি থাকলে প্রথম শব্দাংশের বা -কার উচ্চারিত হয়। ফেন = ফ্যান, কিন্তু ফেনিল = ফেনিল্; পেঁচানো = প্যাচানো, কিন্তু পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে।

 

 

 

 

**অ-উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখো।

উত্তর: অ- উচ্চারণের নিয়মসমূহ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।

 

.       শব্দের শুরুতে যদিথাকে [সেটা স্বাধীন (‘’) কিংবা ব্যঞ্জনে যুক্ত (ক্+=, ম্+= ইত্যাদি) উভয়ই হতে পারে] তারপর হ্রস্ব -কার, দীর্ঘ -কার, হ্রস্ব -কার বা দীর্ঘ -কার থাকে তাহলে সে’-এর উচ্চারণ’-কারের মতো হয়। যথা:

 

শব্দ

 

উচ্চারণ

অধিক

 

ওধিক্

খচিত

 

খোচিতো

 .      শব্দের আদ্যএর পরক্ষবাজ্ঞথাকলে তাহলে সে’-এর উচ্চারণ’-কারের মতো হয়। যথা:

শব্দ

উচ্চারণ

রক্ষা

রোক্খা

লক্ষ

লোক্খো

 

.      শব্দের আদ্যএর পর যদি-কারযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকে তাহলে সে আদ্য’-এর উচ্চারণ’-কারের মতো হয়। যথা:

শব্দ

উচ্চারণ

মসৃণ

মোসৃন্

কর্তৃকারক

র্কোতৃকারোক্

.      শব্দের আদ্যএর পর -ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে তাহলে সে’-এর উচ্চারণ’-কারের মতো হয়। যথা:

 

শব্দ

উচ্চারণ

কন্যা

কোন্না

পদ্য

পোদ্দো

 

 

.      উপরে আমরা যে নিয়মগুলো আলোচনা করেছি তার একটি প্রধান ব্যতিক্রম আছে যদি আদ্য-‘না-বোধক হয় তবে সেএর উচ্চারণ অবিকৃত থাকবে। যথা:

শব্দ

উচ্চারণ

 

 

অসুখ

অসুখ্

অশুভ

অশুভো

 

 

 

’-ফলা উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখো।

.       পদের আদ্য বা প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণে’-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত সে-‘ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না, তবে -ফলাযুক্ত বর্ণটির উচ্চারণে স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য ঝোঁক বা শ্বাসঘাত পড়ে থাকে। যথা:

শব্দ

উচ্চারণ

শব্দ

উচ্চারণ

স্বপ্ন

শপ্নো

ত্বরা

তরা

স্বস্তি

শোস্তি

 

 

.      বাংলা উচ্চারণের ধারা-অনুসারে পদের মধ্যে কিংবা শেষে  ‘’-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত সংযুক্তের বর্ণের উচ্চারণ-দ্বিত্ব ঘটে। যথা:

শব্দ

উচ্চারণ

ভূস্বামী

ভুশ্শামি

ভাস্বর

ভাশ্শর

বিশ্ব

বিশ্শো

 

 

.      উৎ (উদ্) উপসর্গযোগে গঠিত শব্দের-ফলা উচ্চারণ সাধারণত অবিকৃত থাকে। অর্থাৎউদ’-এর’-এর দ্বিত্ব না হয়ে বাঙালা উচ্চারণে’-এর উচ্চারণ হয়ে থাকে। যথা:

শব্দ

উচ্চারণ

উদ্বেল

উদ্বেল্

উদ্বিগ্ন

উদ্বিগ্নো

উদ্বেগ

উদ্বেগ

 

 

.      বাংলা শব্দেক্থেকে সন্ধির সূত্রে সাধারণতআসে এবং সেই আগত’-এর সঙ্গে -ফলা যুক্ত হলে, সে-ক্ষেত্রে’-এর উচ্চারণ (শব্দমধ্যে কিংবা অন্তে) দুবার হয় না, ‘’-  অবিকৃত অবস্থায় উচ্চারিত হয়ে থাকে। যথা:

শব্দ

উচ্চারণ

দিগ্বধূ

দিগ্বোধূ

দিগ্বিজয়ী

দিগ্বিজোয়ি

দিগ্বসনা

দিগ্বশোনা

 

 

.      পদ-মধ্যে কিংবা অন্তে অবস্থিত’-এর সঙ্গে -ফলা যুক্ত হলে , সে-ক্ষেত্রেঅবিকৃত অবস্থায় উচ্চারিত হয়ে। অর্থাৎ -ক্ষেত্রে’-এর দ্বিত্ব-উচ্চারণ না হয়ে’-এর পরে’-এর উচ্চারণ হয়। যথা:

শব্দ

উচ্চারণ

অম্বর

অম্বর

সম্বল

শম্বোল্

বারম্বর

বারোম্বার

 ***এ' ধ্বনি উচ্চারণের ৫ টি নিয়ম লেখো।

 

উত্তর- এ' ধ্বনি উচ্চারণের ৫ টি নিয়ম নিচে দেওয়া হলোঃ

 

১। শব্দের প্রথমে যদি 'এ'-কার থাকে এবং তারপরে ই, ঈ, উ, ঊ, এ, ও, য়, র, ল, শ, এবং, হ থাকলে সাধারণত 'এ' অবিকৃতভাবে উচ্চারিত হয়। যথাঃ একি (একি), দেখি, (দেখি),

 

২। শব্দের আদ্য 'এ'-কারের পরে যদি ং (অনুস্বার) ঙ কিংবা ঙ্গ থাকে এবং তারপরে 'ই' (হ্রস্ব বা দীর্ঘ) 'উ' (হ্রস্ব বা দীর্ঘ) অনুপস্থিত থাকে তবে সেক্ষেত্রে 'এ', 'অ্যা'-কারে রুপান্তরিত হয়। যথাঃ বেঙ [ব্যাঙ, কিন্ত 'ই'-কার সংযুক্ত হলে বেঙি], খেংরা (খ্যাংরা কিন্তু খেঙ্‌রি), বেঙ্গমা (ব্যাঙ্‌গোমা কিন্তু বেঙ্‌গোমি), লেংড়া (ল্যাঙ্‌ড়া), ইত্যাদি।

 

৩। এ-কারযুক্ত একাক্ষর (monosyllable) ধাতুর সঙ্গে আ-প্রত্যয়যুক্ত হলে, সাধারণত সেই 'এ' কারের উচ্চারণ 'অ্যা' কার হয়ে থাকে। যথাঃ ক্ষেপা (ক্ষেপ্‌+আ=খ্যাপা), ঠেলা (ঠেল্‌+আ=ঠ্যালা) ইত্যাদি।

 

৪। মূলে 'ই'-কার বা ঋ-কারযুক্ত ধাতু প্রাতিপাদিকের সঙ্গে আ-কার যুক্ত হলে সেই ই-কার এ-কার রূপে উচ্চারিত হবে, কখনো "অ্যা"-কার হবে না। যথাঃ কেনা (কিন্‌ ধাতু থেকে), মেলা (<মিল্‌),   ইত্যাদি।

 

৫। একাক্ষর (monosyllable) সর্বনাম পদের 'এ' সাধারণত স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ অবিকৃত 'এ'-কার রূপে উচ্চারিত হয়। যথাঃ কে, সে, এ, যে ইত্যাদি।

 

 

                                                      বাংলা বানানের নিয়মসমূহ   

 

 

****তৎসম শব্দের জন্য প্রযোজ্য বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখো।

উত্তর- তৎসম শব্দের জন্য প্রযোজ্য বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপঃ

এই নিয়মে বর্ণিত ব্যতিক্রম ছাড়া তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের নির্দিষ্ট বানান অপরিবর্তিত থাকবে।

 যেসব তৎসম শব্দে বা উভয়ই শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে বা এবং তার কার (↑, ) চিহ্ন হবে। যেমনকিংবদন্তি, চুল্লি, পল্লি, দাবি, মসি, যুবতি, রচনাবলি, ঊষা ঊর্ণা।

৩ রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমনপৰ্দ্দা, কাৰ্য্য না হয়ে বরং পর্দা, কার্য হবে।

 সন্ধির ক্ষেত্রে পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তঃস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার () হবে। যেমনসম্ + কর = সংকর, সম্ + যম = সংযম। সন্ধিবদ্ধ না হলে স্থানে হবে না। যেমনঅঙ্ক, অঙ্গ, আতঙ্ক।

বিসর্গ ()-এর ব্যবহার : শব্দের শেষে সাধারণত বিসর্গ () বসবে না।যেমনকার্যত, মূলত, ক্রমশ ইত্যাদি।

 

২.-তৎসম এর জন্য প্রযোজ্য বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখো।

 , , , সকল -তৎসম শব্দ অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি মিশ্র শব্দে কেবল , -কার এবং এদের কারচিহ্ন (,) ব্যবহৃত হবে। যেমনফরাসি, ফরিয়াদি, ফিরিঙ্গি, সরকারি, মামি, খুশি, বুড়ি, চুন, মুলা, ভুখা ইত্যাদি

  পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে -কার হবে। যেমনলোকটি, নদীটি, গাছটি ইত্যাদি।

  কেবল তৎসম শব্দের বানানে ব্যবহৃত হবে। কোনো প্রকার তৎসম শব্দে অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি মিশ্র শব্দে ব্যবহৃত হবে না। যেমনকোরান, বন, কান, শার্ট, হিসাব, ইত্যাদি।

৪)  –আনো প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে -কার (6) যুক্ত হবে। যেমনকরানো, খাওয়ানো, শোয়ানো,           দোলানো।

৫) হস-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমনটন, বল, শখ, টাক ইত্যাদি।

৩। বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখো।

উত্তর-প্রথম দুটি প্রশ্ন থেকে পাঁচটি নিয়ম লিখলেই হবে।

***৪)ণ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম লেখো।

 

তৎসম শব্দে মূর্ধন্য- এর ব্যবহারের নিয়মকে -ত্ব বিধান বলে।নিম্নে এর পাঁচটি নিয়ম বর্ণনা দেওয়া হলো...
. ,, এরপর মূর্ধন্য- হয়।
   
যেমন: ঋণ,রণ,ভীষণ ইত্যাদি।

. -কার, রেফ,-ফলা,ক্ষ এরপর মূর্ধন্য- হয়।
   
যেমন: তৃণ,বর্ণ,ক্ষণ ইত্যাদি।

. ,, এরপর যদি স্বরধ্বনি,-বর্গ, বর্গ,,,,, এর কোন ধ্বনি থাকে, তাহলে এরপর ধ্বনি দন্ত- এর পরিবর্তে মূর্ধন্য- হয়।যেমন: কৃপণ,হরিণ,ব্রাহ্মণ,অর্পণ ইত্যাদি।

. যুক্তব্যঞ্জনে -বর্গের সঙ্গে মূর্ধন্য- হয়।যেমনঘণ্টা,কণ্ঠ,ভণ্ড ইত্যাদি।

. রাম,নার,উত্তর,পর এরপর 'অয়ন'- শব্দ হলে 'অয়ন'-এর দন্ত- মূর্ধন্য- হয়ে যাবে।যেমন:নারায়ণ,রামায়ণ,উত্তরায়ণ ইত্যাদি।

 

**ষ-ত্ব বিধানের নিয়মসমূহ আলোচনা করো।

তৎসম শব্দের বানানে মূর্ধন্য’-এর ব্যবহারের নিয়মকে ষত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ বাংলা ভাষায় দন্ত্য-‘এর মূর্ধন্য-‘তে রুপান্তরের নিয়মকে -ত্ব বিধান বলে।


ষত্ব বিধানের নিয়মসমূহ

. -কারান্ত এবং -কারান্ত উপসর্গের পর কতগুলো ধাতুতে '' হয়। যেমন অভিসেক » অভিষেক, সুসুপ্ত > সুষুপ্ত, অনুসঙ্গ > অনুষঙ্গ, প্রতিসেধক » প্রতিষেধক, প্রতিস্থান > প্রতিষ্ঠান, অনুস্থান অনুষ্ঠান, বিসম > বিষম, সুসমা > সুষমা ইত্যাদি।

 

. ‘ কারের পর '' হয়। যেমন– ঋষি, কৃষক, উৎকৃষ্ট, দৃষ্টি, সৃষ্টি ইত্যাদি। 

 

. - ধ্বনির পরে যদি , ছাড়া ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি থাকে তবে তার পরে হয়। যেমন– পরিষ্কার। কিন্তু - ধ্বনির পরে , স্বরধ্বনি থাকলে হয়। যেমন– পুরস্কার, তিরস্কার।

 

. সমাসবদ্ধ দুটি পদ একপদে পরিণত হলে এবং প্রথম পদের শেষে (, , ) থাকলে মূর্ধন্য- পরিণত হয়। যেমন– গোষ্ঠী, ভ্রাতুস্পুত্র ইত্যাদি।

 

. -বর্গীয় ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন– কষ্ট, স্পষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ, ওষ্ঠ ইত্যাদি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

hsc সাজেশন -২০২৪ ।।বাংলা ২য় পত্র ।।Short syllabus

উচ্চ মাধ্যমিক সৃজনশীল অনুশীলন(সহপাঠ)